ইহরাম বাধার পর নামাজ

Niyyah for Ihram

হরাম বাধার পর নামাজ-

ইহরাম একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র অবস্থা যা হজ ও উমরাহর প্রক্রিয়ার শুরুতে পালন করতে হয়। ইহরামের মাধ্যমে একজন মুসলমান তার শরীর ও মনকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করে। ইহরাম বাধার পরে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা, নির্দিষ্ট পোশাক পরা, এবং নির্দিষ্ট নামাজ আদায় করা জরুরি।

ইহরাম এবং এর তাৎপর্য-

ইহরাম শব্দটি এসেছে "হুরমা" শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো পবিত্রতা, নিষিদ্ধ করা, বা একটি সম্মানিত অবস্থানে পৌঁছানো। ইহরামের মাধ্যমে একজন মুসলমানকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ এবং আচরণ থেকে বিরত থাকতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইহরামের সময়ে চুল কাটা, নখ কাটা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, এবং নির্দিষ্ট পশু শিকার করা নিষিদ্ধ। ইহরামের এই বিধিনিষেধ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সীমাবদ্ধতাগুলোকে স্বীকার করতে এবং আল্লাহর আদেশ পালন করতে শিখায়।

ইহরাম বাধার পর নামাজ: একটি সুন্নাহ ইবাদত

ইহরাম বাঁধার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করা একটি সুন্নত ইবাদত। এটি সুন্নতে মুআক্কাদা হিসেবে গণ্য করা হয়, যার মানে হল এটি নিয়মিতভাবে পালন করা উচিত। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ইহরাম বাধার পরে এই নামাজ আদায় করতেন, এবং তার সাহাবিরাও এই কাজটি পালন করেছেন। ইমাম শাফি (রহ.), ইমাম মালিক (রহ.), এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) সহ অধিকাংশ ইসলামী স্কলারের মতে, এই নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

নামাজের উদ্দেশ্য ও দোয়া-

ইহরামের নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যাতে তিনি আমাদের হজ বা উমরাহর ইবাদত সহজ ও গ্রহণযোগ্য করেন। নামাজের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করা সুন্নত, এবং এই দোয়াটি হতে পারে ইবাদতের জন্য সাহায্য, পথপ্রদর্শন, এবং সমস্ত ধরনের খারাপ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য।

নামাজের সঠিক পদ্ধতি

ইহরাম বাঁধার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোনো একটি সূরা পড়া যায়, যেমন সূরা ইখলাস বা সূরা কাফিরুন। দ্বিতীয় রাকাতেও একই পদ্ধতিতে সূরা ফাতিহার পরে আরেকটি ছোট সূরা পড়া যায়। নামাজের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করে ইবাদতের নিয়ত এবং পূর্ণতা কামনা করা উচিত।

বিজ্ঞ আলেমদের মতে,

ইসলামী স্কলারের মতে, ইহরামের নামাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে দেখেন। শায়খ ইবনে বায (রহ.) বলেন, "ইহরামের নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে। এটি একটি পবিত্র যাত্রার সূচনা এবং আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা শুরু করার জন্য একটি মহান মুহূর্ত।"

ইমাম নববী (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ "রিয়াদ-উস-সালিহিন"-এ উল্লেখ করেছেন যে, ইহরামের নামাজ একজন মুসলমানকে আল্লাহর কাছে নিবেদিত করে এবং তার আত্মাকে বিশুদ্ধ করে। আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং হজ বা উমরাহর ইবাদতকে সফল করার জন্য এই নামাজ গুরুত্বপূর্ণ।

ইহরাম বাধার পর নামাজ পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ, যা আমাদের আত্মাকে আল্লাহর কাছে নিবেদিত করে এবং হজ বা উমরাহর ইবাদতকে সফল করে তোলে। এটি একটি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ নামাজ, যা আমাদের ইবাদতের যাত্রার প্রথম ধাপ। এই নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি, যাতে তিনি আমাদের ইবাদতকে সহজ ও গ্রহণযোগ্য করেন।

মুসলিম হিসেবে, আমাদের উচিত ইহরামের গুরুত্ব বোঝা এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছাকাছি আসার প্রচেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই ইবাদতগুলো সঠিকভাবে পালনের তাওফিক দান করুন এবং আমাদের হজ ও উমরাহর ইবাদতকে কবুল করুন। আমীন।

তথ্যসূত্র:

ইমাম নববী (রহ.), রিয়াদ-উস-সালিহিন.

ফাতাওয়া ইবনে বায, শায়খ ইবনে বায (রহ.).

ফিকহুস সুন্নাহ, সায়্যিদ সাবিক (রহ.).

Comments

Customer reviews

0 out of 5
5 star
0%
4 star
0%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%

Leave a Comment

Now Loading